Saturday, April 19, 2025
Homeবাংলাদেশ১৫ বছরের অবহেলার পর এখন সংস্কার চন্দ্রিমা উদ্যানে, নাম পরিবর্তিত হয়ে আবারো...

১৫ বছরের অবহেলার পর এখন সংস্কার চন্দ্রিমা উদ্যানে, নাম পরিবর্তিত হয়ে আবারো জিয়া উদ্দ্যান

অনলাইন ডেস্ক।

চন্দ্রিমা আর জিয়া নামের চক্করে ঘুরপাক খেয়েছে এই উদ্যান। বারবার নাম বদলালেও বদলায়নি উদ্যানের পরিবেশ। হয়নি সংস্কার ও উন্নয়ন। তবে সবশেষ নামবদলের পর গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে দেখা গেল, উদ্যানে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধি কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে দেবে যাওয়া মাটি পুনর্ভরাটের কাজ চলছে। শেওলা জমে থাকা কমপ্লেক্সকে ধুয়েমুছে পরিষ্কার করা হচ্ছে। উদ্যানটির আরও কিছু জায়গায় সংস্কার করছেন শ্রমিকেরা।

জিয়া উদ্যান জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাড়ে ১৫ বছর অবহেলা-অযত্নে ছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর উদ্যানটির নাম চন্দ্রিমা থেকে বদলে যেমন জিয়া উদ্যান হয়েছে, তেমনি গণপূর্ত অধিদপ্তরের সুনজরও পড়েছে।

জিয়া উদ্যানে নিয়মিত যাঁরা হাঁটাহাঁটি করতে যান, তাঁরা বলছেন, তাঁদের আশা, উদ্যানটি রমনা পার্কের মতো সাজানো-গোছানো, পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ হবে। সেখানে নগরবাসী সময় কাটাতে যেতে পারবেন। কোনো উৎপাতের মুখে পড়তে হবে না।

জিয়া উদ্যানের কাছেই মণিপুরিপাড়ায় বাস করেন মেসবাহ উদ্দিন। নিয়মিত তিনি জিয়া উদ্যানে হাঁটতে যান। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি কর্তৃপক্ষের উচিত উদ্যানটিকে সুষ্ঠু তদারকিতে নিয়ে আসা। রাজধানীতে এমন জায়গার খুব অভাব। দর্শনার্থীরা যাতে এখানে স্বচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করা জরুরি।’

জিয়া উদ্যানটি জাতীয় সংসদ ভবনের উত্তর পাশে। সংসদ ভবন এলাকায় খোলা জায়গা ও মাঠ থাকলেও তা সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত নয়, তবে সবাই যেতে পারেন জিয়া উদ্যানে।

সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধি কমপ্লেক্স। ছবি- অনলাইন

চন্দ্রিমা আর জিয়া ঘুরে ফিরে নামবদল

গণপূর্ত অধিদপ্তর সার্কেল ৩ এর ২০০১ সালের এক নথি থেকে জানা যায়, জাতীয় সংসদ ভবনের উত্তর পাশের উদ্যানটি একসময় ক্রিসেন্ট লেক পার্ক হিসেবে পরিচিত ছিল। যদিও কবে এবং কীভাবে স্থানটির নাম ক্রিসেন্ট লেক হয়, তা এই নথিতে নেই।

নথিতে বলা হয়েছে, ১৯৮৮ সালের ২০ ডিসেম্বর স্থাপত্য অধিদপ্তর নির্দেশে পার্কটির নামফলকে চন্দ্রিমা শব্দটি যুক্ত করা হয়।

১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি চন্দ্রিমা উদ্যানের নাম পরিবর্তন করে জিয়া উদ্যান রাখা হয়। কিন্তু ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার এসে ওই বছর ২৪ অক্টোবর নাম আবার চন্দ্রিমা উদ্যান রাখে। নথিতে বলা হয়েছে, কাজটি করা হয়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মৌখিক নির্দেশে। এ–সংক্রান্ত কোনো লিখিত আদেশ পাওয়া যায়নি।

২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে পার্কটির নাম আবার জিয়া উদ্যান রাখে। ২০১০ সালের ৩ মার্চ তখনকার আওয়ামী লীগ সরকার আবার জিয়া উদ্যানের নাম বদলে চন্দ্রিমা উদ্যান করে। সর্বশেষ ১৯ মার্চ অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে জিয়া উদ্যান নামটি ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়। ২০ মার্চ গিয়ে দেখা যায়, পার্কটিতে নতুন নামফলক বসানো হয়েছে।

নতুন নাম হয়েছে জিয়া উদ্যান। ছবি- অনলাইন

জিয়া উদ্যানের নাম বারবার বদল, বিএনপির আমলে পার্কটিতে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া এবং আওয়ামী লীগ আমলে অবহেলার কারণ সেখানে থাকা জিয়াউর রহমানের কবরস্থান।

১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর প্রথমে তাঁর মরদেহ দাফন করা হয়েছিল চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায়। পরে সেখান থেকে তাঁর দেহাবশেষ তুলে এনে ২ জুন চন্দ্রিমা উদ্যানে সমাহিত করা হয়। ২০০১ সালে জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার কবরকে কেন্দ্র করে পাঁচ বিঘা জমিতে সমাধি কমপ্লেক্স গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়। ২০০৩ সালে কাজ শুরু হয়, চলে ২০০৭ পর্যন্ত।

বিএনপি সরকারের আমলে লেকের পাড় বাঁধানো হয় এবং একটি দৃষ্টিনন্দন ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ করা হয়। সেতুটি দিয়ে জিয়াউর রহমানের কবরস্থানে সরাসরি যাওয়া যায়। সেতুটি চালু হয় ২০০৪ সালে।

আওয়ামী লীগ আমলে একাধিকবার জিয়াউর রহমানের কবর উদ্যান থেকে সরিয়ে নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছিল। যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছিল, স্থপতি লুই কানের নকশায় শেরেবাংলা নগর এলাকায় কবরস্থানের জন্য কোনো জায়গা রাখা হয়নি। যদিও সে সিদ্ধান্ত কার্যকর করেনি তখনকার সরকার।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয় পোষ্ট